ঈদে-মিলাদ-উন-নবী
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব। দরুদ ও সালাম নাজিল হোক প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।
রবিউল আওয়াল মাস এসে গিয়েছে, এই মাসের ১২ তারিখ প্রায় সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে পালিত হবে "মিলাদ-উন-নবী"।
মিলাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ: জন্মসময়। এই অর্থে ‘‘মাওলিদ’’ শব্দটিও ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ "মিলাদ" শব্দের অর্থ জন্মদিন, আর "নবী" হলেন সমগ্র মানব জাতির শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)।অর্থাৎ "মিলাদ-উন-নবী" হলো মুহাম্মদ (সাঃ) এর জন্মদিন।
সমস্ত মুসলিম উম্মা এই ব্যাপারে একমত যে ইসলামে জন্ম দিবস ও মৃত্যু দিবস পালন করা হারাম তবুও মুসলমানগণ এই অনুষ্ঠান গুলি নাসারা দের অনুকরণে ধুমধামের সাথে পালন করছে।
মীলাদের কোন আসল বা সুত্র প্রথম তিন যুগের (সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীগণ) কোন সালফে সালেহীন থেকে বর্ণিত হয় নি; বরং তাঁদের যুগের পরে এর উদ্ভাবন ঘটেছে।
ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করার ক্ষেত্রেও শিয়াগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। উবাইদ বংশের রাফেযী ইসমাঈলী শিয়াগণ ফাতেমী বংশের নামে আফ্রিকার উত্তরাংশে রাজত্ব স্থাপন করেন। ৩৫৮ হিজরীতে (৯৬৯ খ্রি:) তারা মিশর দখল করে তাকে ফাতেমী রাষ্ট্রের কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলেন এবং পরবতী ২ শতাব্দীরও অধিককাল মিশরে তাদের শাসন ও কর্তৃত্ব বজায় থাকে। গাজী সালাহুদ্দীন আইঊবীর মিশরের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের মাধ্যমে ৫৬৭ হিজরীতে (১১৭২খ্রি:) মিশরের ফাতেমী শিয়া রাজবংশের সমাপ্তি ঘটে। এই দুই শতাব্দীর শাসনকালে মিশরের ইসমাঈলী শিয়া শাসকগণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ২ ঈদ ছাড়াও আরো বিভিন্ন দিন পালন করতেন, তন্মধ্যে অধিকাংশই ছিল জন্মদিন। তাঁরা অত্যন্ত আনন্দ, উৎসব ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৫টি জন্মদিন পালন করতেন: ১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন, ২) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মদিন, ৩) ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার জন্মদিন, ৪) হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মদিন ও ৫) হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্মদিন। এ ছাড়াও তারা তাদের জীবিত খলীফার জন্মদিন পালন করতেন এবং ‘‘মীলাদ’’ নামে ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মদিন (বড়দিন বা ক্রীসমাস), যা মিশরের খ্রিষ্টানদের মধ্যে প্রচলিত ছিল তা আনন্দপ্রকাশ, মিষ্টি ও উপহার বিতরণের মধ্য দিয়ে উদযাপন করতেন।
সুতরাং এটা পরিস্কার যে "মিলাদ-উন-নবী" মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে পালন করেননি, আর সাহাবীদের মিলাদ-উন-নবী পালন করার নির্দেশ ও দিয়ে যাননি। তারই ফল স্বরূপ সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবা-তাবেয়ী দের সময়ে মিলাদ-উন-নবী নামে কোনো অনুষ্ঠান পালনের ঘটনা পাওয়া যায়না।
অর্থাৎ "মিলাদ-উন-নবী" একটি ইসলাম বহির্ভুত বিষয়। দ্বীনি ইসলামে এর কোনো স্থান নেই। আর তাই "মিলাদ-উন-নবী" পালন বিদাত (দ্বীনের মধ্যে কোনো নতুন বিষয় সংযোজন যা ইসলামে নেই)।
আর বিদাত প্রসঙ্গে প্রিয় নবি মুহাম্মদ (সাঃ)বলেছেন -
"আবূ জাঁফর মুহাম্মদ ইবনু সাব্বাহ ও আবদুল্লাহ ইবনু আওন হিলালী (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মীয় ব্যাপারে এমন বিষয় উদ্ভাবন করে যা তাতে নেই তা পরিত্যাজ্য। "
(বইঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৩০/ বিচার বিধান,হাদিস নম্বরঃ ৪৩৪৩)
হাদিসের মানঃ সহীহ
মুসলিমের বর্ণনার ভাষা হলো এই যে,যে ব্যক্তি এমন কাজ করবে যা আমাদের দ্বীনে নেই, তা গ্রহণযোগ্য হবে না (অর্থাৎ প্রত্যাখ্যাত হয়ে যাবে)।
‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, সর্বোত্তম কালাম হল আল্লাহর কিতাব, আর সর্বোত্তম পথ নির্দেশনা হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পথ নির্দেশনা। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল নতুনভাবে উদ্ভাবিত পন্থাসমূহ।
[ সহীহ বুখারী :তাওহিদ প্রকাশনী- ৭২৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮১]
‘‘তোমাদের কাছে যে বিষয় সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তা ঘটবেই, তোমরা তা ব্যর্থ করতে পারবে না’’- (সূরাহ আন‘আম ৬/১৩৪)।
আবার কিছু মানুষ আছেন যাঁরা "মিলাদ-উন-নবী" পালন করা বিদাত জেনে ঐ দিন তাঁরা মিলাদ-উন-নবী পালন করেননা। পরিবর্তে তাঁরা ঐ নির্দিষ্ট দিনটিতেই "সীরাত-উন-নবী" নামে একটি অনুষ্ঠান পালন করেন অথবা কোনো ইসলামিক জলসার বা মিলাদ মহফিলের আয়োজন করেন। "সীরাত-উন-নবী" শব্দের অর্থ মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী সম্পর্কে আলোচনা। এটি অত্যন্ত উত্তম কাজ। ইসলামিক জলসাও ভালো। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই "সীরাত-উন-নবী" তো বছরের যেকোনো দিনেই পালিত হতে পারে, তাহলে প্রতি বছর ঐ নির্দিষ্ট দিনটিতেই পালিত হবে কেন???
তাহলে কি এটি ও বিদাত হয়ে গেলনা?
এদের দেখে কোরানে উল্লিখিত সেই জাতির কথা মনেপড়ে যায়, যাদেরকে আল্লাহ পাক তাঁর আদেশের নাফরমানীর জন্য বানরে পরিণত করেছিলেন।
আল্লাহ পাক ঐ জাতিকে শনিবার দিন মাছ ধরতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তারা দেখল শনিবার দিন অন্যান্য দিন অপেক্ষা নদীতে অনেক বেশি মাছ আসে অথচ ঐ শনিবার দিনটিতেই আল্লাহ পাক তাদের মাছ ধরতে নিষেধ করেছেন। ফলে তারা শনিবার দিন মাছগুলি আটকে রাখত আর রবিবার দিন মাছগুলি ধরে ফেলত। আর এইভাবেই তারা আল্লাহর আদেশের নাফরমানী করে।
আল্লাহর বাণী:
"আর তাদেরকে সেই জনপদের অবস্থাও জিজ্ঞেস কর যা সমুদ্রের তীরে অবস্থিত ছিল। যখন তারা শনিবারের আদেশ লংঘন করেছিল। শনিবারের দিন মাছ পানিতে ভেসে তাদের নিকট আসত, কিন্তু যেদিন তারা শনিবার উদযাপন করতনা, সেদিন ওগুলি তাদের কাছে আসতনা, এভাবে আমি তাদের নাফরমানীর কারণে তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম।
যখন তাদের একদল লোক অপর দলের নিকট বলেছিলঃ ঐ জাতিকে তোমরা কেন উপদেশ দিচ্ছ যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করবেন অথবা কঠিন শাস্তি দিবেন? তারা উত্তরে বললঃ তোমাদের রবের নিকট দোষমুক্তির জন্য ও অক্ষমতা পেশ করার জন্যে,এবং এই আশা করছি যে, হয়তো বা এই লোকেরা তাঁর নাফরমানী হতে বেঁচে থাকবে।
তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয় তা যখন তারা বিস্মৃত হয় তখন যারা অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করত তাদেরকে আমি উদ্ধার করি, আর যালিমদেরকে তাদের অসৎ কর্মের কারণে কঠোর শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম।
অতঃপর যখন তারা বেপরোয়াভাবে নিষিদ্ধ কাজগুলি করতে থাকল যেগুলো থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। তখন আমি বললামঃ তোমরা ঘৃণিত ও লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।"(সূরা আরাফঃ ১৬৩-১৬৬)
আল্লাহ্ তায়ালা আমাদেরকে শির্ক মুক্ত করুন, আমাদেরকে সমস্ত বিদাত থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।
আরও বিস্তারিত জানতে নিচের Download Link থেকে Audio টি Download করে শুনুন।
কোন মন্তব্য নেই