গল্প: হালাল ভালোবাসা পর্ব-১
আজ নীলার বিয়ে। নীলা দেখতে তেমন একটা সুন্দরী নয় বেশী বড় পরিবারের মেয়েও নয় তবে শিক্ষিত।
কলেজে থাকতেই নীলার ইচ্ছে ছিলো প্রেম করে বিয়ে করার। তার সব বান্ধবীরা যেমনটি করেছে। কিন্তু নীলার পক্ষে তা সম্ভব হয় নি কারন সে দেখতে সুন্দর নয় আর তার চেয়ে বড় কথা সে গরীব পরিবারের মেয়ে।
শেষে প্রেম করার ভুত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বাবা-মায়ের কথায় রাজী হয়ে যায়। কিন্তু এই বিয়েতে নীলার বেশ আপত্তি আছে।
কারণ নীলার জন্য যাকে পাত্র হিসেবে ঠিক করা হয়েছে তার মুখে এক গোছা দাঁড়ি। দেখতেই কেমন যেন বয়ষ্ক বয়ষ্ক লাগে নীলার কাছে, তাও বাবা-মায়ের কথা মেনে নেয় সে।
কিন্তু আজ যে নীলার বিয়ে তা নীলাদের বাড়ি দেখে কেউ বলবেই না। বিয়ের কোনো আয়োজনই নেই তাদের বাড়িতে। কাউকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা নীলা এখনো তার হবু স্বামীকে দেখেনি। দুদিন আগে বরের মা-বাবা নীলাকে পছন্দ করে গেছেন কিন্তু বরের ছবি আনেন নি। আর বরও নীলাকে দেখেনি।
নীলা দেখেছে তাদের থেকেও অনেক গরীব পরিবার তাদের একমাত্র মেয়ের বিয়ে অনেক ধুমধাম করে দিয়েছে, কিন্তু তার মাথায় আসছে না যে তার মা-বাবা এমনটা কেন করছে তার সাথে!
নীলার মা সকালে একটা বোরখা, মুখোশ , হাত মোজা, পা মোজা নিয়ে নীলার ঘরে ডুকলো...
> নে মা এগুলো পরে নে রবপক্ষ আসার সময় হয়ে গেছে।(নীলার মা নীলাকে ওগুলো দিয়ে বললো)
> বরপক্ষ আসছে তো বোরখা পরতে হবে কেন!(নীলা)
> তুই বোরখা পরে বিয়ে করবি।(নীলার মা)
> মা তুমি কি মজা করছো! বোরখা পরে কেউ বিয়ে করে!(নীলা)
> তোর বর বলছে পরতে। আমি কিছু জানি না।(নীলার মা কথাগুলো বলেই চলে গেল)
একটু রাগ নিয়েই নীলা বোরখা পরে নেয়। এই প্রথম সে বোরখা পরছে এর আগে কখনোই সে বোরখা পড়ে নি। নীলা জেনারেল শিক্ষিত মেয়ে তাই এই বোরখা তার কাছে বিরক্তিকর লাগছে।
দুপুরে বরপক্ষ চলে এলো এবং কাজী সাহেবও চলে আসে।
বিয়ের সকল কাজ শুরু করার আগে বর জানায় সে কণের সাথে একা কিছু কথা বলতে চায়।
নীলা তখনও পর্দার আড়ালে নিজের রুমেই বসেছিল নিজের মায়ের সাথে। নীলার বাবা এসে নীলার মাকে নিয়ে যায়। শোয়াইব তখন নীলার রুমে ঢুকে। আপনাদের বলতে ভুলেই গেছি নীলার হবু স্বামীর নাম মোঃ শোয়াইব ইসলাম।
নীলা দেখলো একজন পুরুষ যার সুন্দর একটা চেয়ারা আর তার মুখের দাঁড়ি যেন তার সুন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে। মাথায় টুপি , গায়ে সাদা পাঞ্জাবী নীলা যেন কথা বলতেই ভুলে গেছে।
শোয়াইব এসে নীলার সামনে বসে....
> আশ-সালামু আলাইকুম..(শোয়াইব)
সালাম শুনে নীলা বাস্তবে ফিরে। নীলা সালামের জবাব দেয়।
> কিছু কথা বলতে চাই দয়াকরে ততক্ষন মনোযোগ দিয়ে শুনবেন যতখন আমি বলবো।(শোয়াইব)
নীলা মাথা নাড়িয়ে শায় দেয়...
> দেখুন আমদের এমন একটা সম্পর্কে আবদ্ধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে যা অনেক গুরুত্বপূর্ন একটি সম্পর্ক। দেখুন হাদীসে বা কোরআনে জানি না কোথাও উল্লেখ আছে কিনা যে একজন মানুষ তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে একই জান্নাতে থাকবে কিন্তু এটা অবশ্যই উল্লেখ আছে যে নেককার স্বামী-স্ত্রী একই জান্নাতে থাকবে। দুনিয়ার সকল সম্পর্কই মৃত্যুর সাথে সাথে শেষ হয়ে যাবে কিন্তু নেককার স্বামী-স্ত্রী জান্নাতে একই সাথে থাকবে। পৃথিবীর প্রথম দুজন মানুষের সম্পর্ক ছিলো স্বামী-স্ত্রীর। আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে ঐ চিরস্থায়ী সুখের স্থান জান্নাতে থাকতে চাই। আপনি আমাকে আপনার স্বামি হিসেবে গ্রহণ করার আগে আমি কিছু শর্ত রাখতে চাই আমার স্ত্রী হিসেবে যা আপনাকে পালন করতেই হবে...
প্রথম, আমার মা-বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। আমার মা-বাবার বয়স হয়েছে আমি জানি তাদের ভুল হয় কিন্তু তাদের সাথে তর্ক করতে পারবেন না। ঠান্ডা মাথায় তাদেরকে ভদ্রতার সাথে বোঝানোর চেষ্টা করবেন। তারপরও যদি তারা না বোঝে তো আমাকে বলবেন কিন্তু খারাপ ব্যবহার করতে পারবেন না। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সবচেয়ে বড় সম্পর্ক হলেও সন্তানের উপর সব চেয়ে বেশি হক থাকে তার মা-বাবার। আর নারীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি হক থাকে তার স্বামীর।
দ্বিতীয়, আমি জানি আপনি শিক্ষিত। আল-হামদুল্লিহ ভালো কথা কিন্তু আপনি কখনো চাকরি করার ইচ্ছাও রাখতে পারবেন না। এটা আপনার পর্দার খেলাফ হবে। আমি যতটুকু এনে দিতে পারি সেটাই গ্রহণ করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
তিন, শরীয়তের একটা বিধানও আপনি বাদ দিতে পারবেন না। শরীয়তের বিষয়ে একচুলও ছাড় আপনি পাবেন না। বিবাহের পর আপনি আমার অধীনস্ত হবেন তখন আমি যদি আপনাকে শরীয়তে বিষয় গুলোর প্রতি সতর্ক না করি তবে আল্লাহর কাছে আমার জবাবদীহিতা করতে হবে। আর আমি আল্লাহকে অনেক বেশী ভয় পাই।
চার, আমি আদম সন্তান। ভুল আমারও হয়। দয়াকরে আমার ভুলগুলো আমাকে ধরিয়ে দিবেন। যদি কোনো কারণে আমি আপনার উপর রেগে যাই তবে আপনিও পালটা রাগারাগী করবেন না। দয়াকরে তখন সবর করবেন। যখন আমার রাগ কমে যাবে তখন আমার ভুলগুলো আমায় বুঝিয়ে বলবেন। আমি চাই আমাদের মধ্যে যেন সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্ব থাকে। কোনো বুল বোঝা-বুঝি না হয়।
জান্নাতি পরিবারের আলামত দুনিয়াতেই বোঝা যায় আমি চাই আমার পরিবারেও সেই আলামতগুলো থাকুক।
আপনার জন্য এই চারটা কাজই করতে হবে যদি আপনি আমার স্ত্রী হন। আপনার কাছে আর কিছু চাওয়ার নাই। এখন আপনার শর্তের কথা বলি। শুধু নিজের কথাই বলবো না আপনি যদি এই চারটা শর্ত মানতে পারেন যতদিন বেঁচে থাকবো ইনশাআল্লাহ আপনার সব শর্তই মেনে নেওয়া চেষ্টা করবো। এখন আপনি কিছুক্ষন সময় নিয়ে চিন্তা করে দেখেন আপনি এই চারটা শর্ত মেনে নিতে পারবেন কি না! সমস্যা নেই আপনি যদি রাজী না থাকেন তবে আপনাকে বাধ্য করা হবে না।
আমি বাহিরে গেলাম। আপনি যতখন চিন্তা করবেন ততখন আপনার রুমে কেউ ডুকবে না। আপনার মা দরজার পাশেই দাড়ানো থাকবে আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেলে দরজার আওয়াজ করবেন আপনার মা রুমে ডুকবে। তারপর আপনার সিদ্ধান্তর উপরই ঠিক হবে এই বিয়ে হবে কি না?
এরপর শোয়াইব সালাম দিয়ে রুম থেকে চলে গেল...
নীলা বাকরুদ্ধ ভাবেই এতক্ষন শোয়াইবের কথা শুনছিল। নীলা তার বান্ধবীদের বিয়েতে উপস্থিত ছিল কিন্তু এমনটা সে কখনো দেখেনি।
আর সবচেয়ে বড় কথা নীলা আজ পর্যন্ত শোয়াইবের মতো ছেলে দেখেনি। এতক্ষন নীলা একটি কথাও বলতে পারেনি হয়তো চোখের পাতাও ফেলেনি সে।
নীলা কলেজ লাইফে প্রেম করতে চেয়েছিলো কিন্তু সে দেখতে বেশী একটা সুন্দর নয় বলে তা হয়ে উঠেনি। একটা ছেলের সাথে নীলার ভালোই ভাব হয়েছিলো কিন্তু পরে জানতে পেড়েছিলো ছেলেটা আসলে মজা করছে।
নীলা অনেক কষ্ট পেয়েছিলো সেদিন। কেঁদেছিলো অনেক কিন্তু কিছুই করার ছিলো না তার।
আজ নীলা একা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না আসলে সে কি করবে! নীলা দরজায় টোকা দিলো। নীলার মা রুমে প্রবেশ করলো.....
এরপর নীলার মা অনেক বুঝিয়ে নীলাকে রাজী করিয়ে দিলো এবং যথারীতি শোয়াইবের সাথে নীলার বিয়ে হয়ে গেল।
বিবাহের কাজ শেষে নীলা শোয়াইবের সাথে গাড়ীতে করে তার নতুন গন্তব্যের নিকট যেতে লাগলো....
নীলার মনে অনেক ভয় কাজ করছে....
প্রথমত, শোয়াইব নীলাকে এখনো দেখেনি এ কথা সে তার মায়ের কাছ থেকে শুনেছে। আচ্ছা শোয়াইব আমাকে দেখার পর মেনে নিবে! আমি তো সুন্দর না!
দ্বিতীয়ত, আমি ওনাদের বাড়ীর কাউকে চিনি না। নতুন পরিবেশ, তারা আমার সাথে কেমন ব্যাবহার করবেন! আর শোয়াইবের কথা শুনেও মনে হলো তিনি অনেক কঠোর!
আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন কি আছে আমার তাগদিরে.....
.
নতুন ঠিকানা নিয়ে নীলার বেশ অনেকটাই ভয় কাজ করছে। নীলা কখনোই চায়নি বা কখনো কল্পনাও করতে পারেনি। হুট করে নতুন একটা পরিবেশ নীলা কীভাবে এসব সামলাবে সে বুঝেই উঠতে পারছে না। তার চেয়েও বড় ভয় নীলার মনে কাজ করছে তা হলো শোয়াইবকে নিয়ে। নীলা তার মায়ের কাছ থেকে শুনেছে শোয়াইব এখনো তাকে দেখেইনি। নীলার ভয় শোয়াইব যদি তাকে মেনে নিতে না পারে! আর তার(শোয়াইবের) কথা শুনেতো মনে হলো সে অনেক কঠোর প্রকৃতির মানুষ। আর নতুন পরিবারের সবাই আমার সাথে কেমন ব্যবহার করবে!
নীলার ভাবনার অবসান ঘটে যখন গাড়ীটা থেমে যায়। সন্ধা হয়ে গেছে। মাগরিবের আযান শোনা যাচ্ছে চারপাশে।
নীলা কিছুটা অবাকই হলো। কারণ বর পক্ষের বাড়িতেও কোনো আয়োজন নেই। বাড়ীটাও কেমন অদ্ভুদ! অনেকটা জায়গা প্রাচীর দিয়ে ঘেড়া তার মাঝে ছোট ছোট দুটি বাড়ী। দেখতে কিছুটা জেলখানার মতো।
নীলাকে গাড়ী থেকে নামানো হলো। নীলার শ্বাশুরী তাকে বাড়ীর মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে। নীলা পিছনে ফিড়ে দেখলো শোয়াইব ও তার বাবা(নীলার শ্বশুর) বাড়ীর বাইরে চলে যাচ্ছে।
শোয়াইবের মা নীলাকে নীলার রূমে নিয়ে আসলো....
> মা তুমি চেন্জ করে অযু করে নাও আমি তোমার জায়নামাজ নিয়ে আসছি। তুমি নামাজ পড়ে নাও তারপর কিছু কথা বলবো।(শোয়াইবের মা)
নীলা মাথা নাড়িয়ে শায় দেয়।
নীলার শ্বাশুরী রূম থেকে চলে যায়।
নীলা এবার রুমটার দিকে লক্ষ করে...
রুমটা একদমই সাজানো হয়নি তবে সব কিছুই গোছানো। নীলার নিজের রুমটাও হয়তো এতোটা গোছানো না। ঘরে বেশি জিনিস পত্র নেই কেবল মাত্র একটা বইয়ের তাক আর একটা টেবিল রয়েছে। রূমের আরেক কোনে দু-তিনটা চেয়ার আর অপর পাশে একটি আলমারী।
নীলা বেশি চিন্তা না করে ফ্রেস হয়ে অযু করে নিলো। রুমে এসে দেখে তার জন্য জায়নামাজ রাখা আছে প্রস্তুত। নীলার মনটা কেমন যেন শান্ত হয়ে গেল। ভিতরে ভিতরে কেমন যেন শান্তিবোধ করছে সে। নীলা আর দেড়ি না করে নামাজে দাড়িয়ে গেল।
.
নামাজ শেষে নীলার চোঁখ থেকে নিজের অজান্তেই পানি পড়তে শুরু করলো। সে জানে না আজ কতদিন পর সে নামাজে দাড়িয়েছে। অনেক ছোট ছিল যখন নীলা তার মনে পরে তখনই শেষ তার মায়ের সাথে নামাজ পড়েছিল আর মাঝে মাঝে শবে-কদর এর নামাজ পরতো সে।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই নীলাষ শ্বাশুরী রুমে প্রবেশ করে...
সে দেখে নীলার নামাজ শেষ কিন্তু সে(নীলা) জায়নামাজে বসে কি যেন ভাবছে!
> তোমার কি নামাজ শেষ হয়েছে মা!(শ্বাশুরী)
> (শ্বাশুরী কথায় নীলার ঘোড় ভাঙ্গে) হ্যা এই তো শেষ হয়েছে।(নীলা)
> তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো মা!(শ্বাশুরী)
> হ্যা বলুন!(নীলা)
নীলা শ্বাশুরী নীলাকে খাটে নিয়ে বসালো...
> দেখো মা আমার কোনো মেয়ে নেই কিন্তু এটা নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই আল্লাহর কাছে। আমাদের ছেলেই আমাদের কাছে সব। কিন্তু মা এই বৃদ্ধ বয়সে এইও আমাদের সময় দিতে পারেনা, কাজ করতে হয় ওকে। আমরা বুড়ো-বুড়ি বাড়িতে একাই বসে থাকি। খুব একা একা লাগে মা আমাদের। তুমি পারবে মা আমাদের বুড়ো-বুড়িকে একটু সময় দিতে! পারবে মা আমাদের বউমা না হয়ে আমাদের মেয়ের মতো হতো!(নীলার হাত ধরে বলে তার শ্বাশুরী)
> (নীলা ততখনাত বলে উঠলো) কি বলছেন মা। এমন ভাবে বলছেন কেন! আপনি তো আমার মায়ের মতোই।(নীলা)
> মা তোমাকে আরো একটা কথা বলবো!(শ্বাশুরী)
> হ্যা মা বলুন!(নীলা)
> মা আমার ছেলেকে আমি চিনি। আমার ছেলেটা অনেক ভালো। আল্লাহর রহমতে ওর এখনো পর্যন্ত কোনো বাজে অভ্যাসের কথা আমরা জানতে পারিনি। তবে ওর একটু রাগ বেশি।(শ্বাশুরী)
> (এ কেমন কথা! খারাপ অভ্যাস নেই কিন্তু রাগ বেশি!)(মনে মনে ভাবে নীলা)
> জানি মা তুমি ভাবছো, যার রাগ বেশি সে আবার ভালো কীভাবে! শোনো মা তুমি যদি ইসলামে সকল বিষয়গুলো পরিপূর্ণ ভাবে আমল করার চেষ্টা কর তখন ও তোমার উপর একটুও খারাপ ব্যবহার করবে না। তোমার কোথাও ভুল হয়ে গেলে সুন্দর করে দেখিয়ে দিবে কিন্তু করনো রাগ করবে না। কিন্তু তুমি যদি নামাজ না পড়ো ও তোমার উপর রেগে যাবে। আমার সাথে রাগ করে ও আমার সাথে তিনদিন কথা বলেনি একসময়, কারণ আমি নামাজ ক্বাজা করেছিলাম ২ ওয়াক্তের..(বলেই সে হাসতে শুরু করে)
> (নীলা চুপচাপ তার শ্বাশুরীর কথা শুনতে থাকে)
> ওকে খুশি রাখতে হলে আর কিছু নয় দ্বীনদার হতে হবে...(এভাবেই আরো অনেক কথা হয় নীলা আর তার শ্বাশুরীর। তাদের গল্প করতে করতেই ইশার আযান ভেসে আসে তাদের কানে। নীলাকে নামাজ পড়তে বলে নিজের রুমে চলে যায় তার নতুন মা। এতক্ষন কথার মধ্যে নীলা ভালোভাবেই বুঝে গেছে এই মানুষটা কেমন আর এনার পরিবারটা কেমন।
নীলা নামাজের জন্য চলে গেল...
.
রাত ৮.০০ টা....
নামাজের পর থেকে নীলা একাই রুমে বসে আছে। কেউ আসছে না তার কাছে। নীলার খুব মন চাইছে তার স্বামীকে দেখতে। কেমন যেন একটা টান অনুভব করছে নিজের মধ্যে শোয়াইবের জন্য। গাড়ি থেকে নামার সময় শেষ দেখেছিল তার স্বামীকে আর এখন রাত ৮ টা!
নীলা একা একা বোড় হচ্ছিল তাই সে বইয়ের তাকটির দিকে হাটা শুরু করলো। নীলা যা আশা করেছিলো তার একটি বইও এখানে নেই। এখানে কোরআনের কিছু তাফসির আর ইসলামিক সাহিত্যের বেশ অনেকগুলো বই রাখা আছে। নীলা "রাহে আমল" প্রথম খন্ড বইটি নিয়ে পড়তে লাগলো।
নীলা বইটি পড়ছে তার বেশ ভালো লাগছে কিন্তু এর কথা গুলো বুঝে উঠতে পারছে না। কারণ নীলা ইসলামের সাথে ভালো ভাবে পরিচিত নয় তাই এই বইয়ের বিষয়গুলো সে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারছে না।
.
> বইটি থেকে কিছু নিতে পারলেন!(শোয়াইব)
নীলা চমকে উঠলো। আসলে সে খেয়ালই করেনি শোয়াইব কখন রুমে এসেছে।
> আপনি কখন আসলেন!(নীলা)
> এই তো এখনই।(শোয়াইব দাড়িয়ে মুচকি হাসছে)
নীলা অপলক তাকিয়েই আছে...
> আচ্ছা তো বইটি থেকে কিছু শিখতে পারলেন!(শোয়াইব)
> ইয়ে মানে কিছু বুঝে উঠতে পারছি না!(নীলা)
শোয়াইব আবারও মুচকি হসলো...
> আসলে আপনি ইসলামের সাথে ভালোভাবে পরিচিত নন তাই একটু সমস্যা হচ্ছে আপনার।(শোয়াইব)
নীলা চুপ করেই রইলো...
> আচ্ছা কিছু প্রশ্ন করবো!(শোয়াইব)
> হুম করুন...
> আপনি কি মুসলিম!(শোয়াইব)
নীলা অবাক হয়ে শোয়াইবের দিকে তাকি আছে..
> আরে বলুন আমি আপনাকে বুঝিয়ে বলছি আসলে ইসলাম কি!(শোয়াইব)
> হ্যা..(নীলা)
> আল্লাহর রসুল (সা.) বলেন, "যে ব্যাক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে এক ওয়াক্ত নামাজ ছেড়ে দিলো সে কাফির হয়ে গেল।" এই হাদিসটা যে সহিহ এই কথা প্রত্যেকটা আলেমই জানেন। তাহলে এখন বলো তুমি কি মুসলিম!(শোয়াইব)
> (নীলা মাথা নিচু করে রাখে। আসলে নীলা এসবের কিছুই জানতো না।)
> আমি জানি এতে তোমার কোনো দোষ নেই তুমি সঠিক পথের সন্ধান পাওনি। বাংলাদেশের প্রায় ৯০% মানুষই মুসলমান কিন্তু যদি এই হাদিসটা দিয়ে বিচার করো তাহলে কত জন মুসলিম আছে এই দেশে! হয়তো ৫% ও না। আসলে মানুষ অন্ধকারেই ডুবে আছে। আমাদের মুসলিম জাতী এখন বিশ্বাস করে সে কালেমা পড়েছে এখন সে মুসলিম। কিন্তু না কালেমা কোনো মন্ত্র নয় যে এটা পড়লেই মানুষ মুসলমান হয়ে যায়। কালেমা হচ্ছে ইসলামের শপথ বাক্য। কালেমা পড়লেই সে মুসলিম নয় কালেমার হক আদায়কারী হলো মুসলিম বা মুসলমান। মুসলমান শব্দের অর্থ হলো আত্মসমার্পনকারী। "একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে আমাদের রসুল (সা.) এর দেখানো পন্থা অনুযায়ী" এটাই হচ্ছে কালেমার হক। যে এই হক আদায় করে একমাত্র সেই ব্যাক্তি হলো মুসলমান। এবার আসি সেই হাদিসটার ব্যাখ্যায়। আচ্ছা নামাজ তো আল্লাহ তায়ালার হুকুম এতে কোনো সন্দেহ আছে!(শোয়াইব)
> না..
> তাহলে যে ব্যাক্তি জেনেশুনে আল্লাহ তায়ালার কোনো হুকুম ত্যাগ করে সে তো কাফেরই হতে পারে তাই না!(শোয়াইব)
> তাহলে সবাই নামে মাত্র মুসলিম!(নীলা)
> সবাই নয় কিছু ইমানদার মানুষও আছে এখনো। আর অধিকাংশই এখনো ভুল ধারণা নিয়েই পড়ে আছে। কেই এই ধারণা নিয়ে পড়ে আছে যে সে যতই গুণাহ করুক না কেন আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিবেন। কেউ ধারনা করছে নবী তার উম্মতদের না নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন না। আর কেউ ধারণা করছে মুসলিম হতে পারলেই জান্নাতী।(শোয়াইব)
> কথাগুলো কি মিথ্যা!(নীলা)
> না এখানে একটি কথাও মিথ্যা নয়। আল্লাহ তায়ালা চাইলে আকাশ পরিমান গুণাহও ক্ষমা করে দিতে পারেন তার দয়ার কাছে এগুলো কিছুই নয় কিন্তু মানুষ তার দয়া পাওয়ার উপায় খোঁজে না। এই কথাও সত্যি যে আমাদের নবী তার উম্মতদের সাথে করে না নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন না কিন্তু মানুষ তার উম্মত হওয়ার নামে বিভিন্ন বেদায়াতের সাথে সম্পর্ক রাখে। আর এই কথাও সত্যি যে যার মনে বিন্দু পরিমান ইমান থাকবে সেও একদিন জান্নাতে প্রবেশ করবে কিন্তু মানুষ বোঝেই না ইমান কি! আল্লাহকে মনে মনে বিশ্বাস করি শুধু এটুকুর নামই ইমান নয়। তিনটি চিহ্ন আছে ইমানের..
১. অন্তরে বিশ্বাস রাখা
২. মুখে শিকার করা
৩. আমলের মাধ্যমে করে দেখানো।(আমল অর্থ কাজ)
এই তিনটি বিষয় যার মধ্যে থাকে ইমানদার। যদি এমন ইমানদার কেউ হয় তবে সে যতই পাপ করুক একদিন আল্লাহ তায়ালা ঠিকই তাকে জান্নাত দান করবেন।(শোয়াইব)
> তাহলে তো ইসলাম অনেক কঠিন!(নীলা)
শোয়াইব মুচকি হাসতে থাকে নীলার কথা শুনে...
> আপনি হাসছেন কেন!(নীলা)
> তুমি প্রথম শুনছো এসব তাই খুব কঠিন মনে হচ্ছে। তোমাকে আরো বুঝিয়ে বলবো সমস্যা নাই। একমাত্র ইসলামই হলো পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। অনেক রাত হয়েছে চলো খাবার খেয়ে আসি তারপর না হয় বাকি বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলবো..(শোয়াইব)
> চলুন...
.
> ইসলামের বিধানতো তাহলে অনেক কঠিন!(নীলা)
নীলার কথা শুনে শোয়াইব মুচকি হাসতে থাকে..
> আপনি হাসছেন কেন!(নীলা)
> তোমার কথা শুনে। শোনো ইসলাম একদমই কঠিন নয়। এটাই হলো একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এখানে জীবনের প্রত্যেকটা জিনিসেরই নির্দেশনা রয়েছে। তুমি যখন এগুলোর সাথে পরিচিত হবে তখন আর কঠিন মনে হবে না।(শোয়াইব)
> কোন গুলোর সাথে পরিচিত হবো! নামাজ, রোজা, যাকাত , হজ্জ এর বাহিরেও কি ইসলাম আছে!(নীলা)
> হুম আছে। মানুষের জীবনের সব জায়গায় ইসলামের বিধান আছে। মানুষের জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যুর পর পর্যন্ত সকল বিষয়েই ইসলামের বিধান রয়েছে। অনেক রাত হয়েছে চলো আগে কিছু খেয়ে নেই তারপর না হয় আর কিছু বলবো!(শোয়াইব)
> হুম চলুন...
.
রাত প্রায় ১০টা..
শোয়াইবের মা-বাবা খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। শীতের কারনে খাবারগুলো ঠান্ডা হয়ে গেছে। নীলাকে খাবার ঘরে বসিয়ে রেখে শোয়াইব খাবারগুলো গরম করতে গেছে। নীলারও একা একা বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না তাই সেও রান্না ঘরে চলে গেল....
> আপনি রান্না করতে পারেন!(নীলা)
> হুম পারি তো। আমার রান্না খুব ভালো হয় আমার মা বলেছে।(শোয়াইব)
> কি কি রান্না করতে পারেন!(নীলা অনেক আগ্রহের সাথে)
> খুব ভালো ডিম ভাজতে পারি....
শোয়াইবের কথা শুনে নীলা হাসতে শুরু করে। যেন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবে সে...
শোয়াইব এক দৃষ্টিতেই নীলার দিকে তাকিয়ে আছে।
নীলা খেয়াল করলো শোয়াইব তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে কিছুটা লজ্জা পেল আর হাসি থামিয়ে...
> এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন!(নীলা)
> না মানে ইয়ে!....
> এই প্রথম আপনার মুখে কথা জড়াতে দেখলাম। আরে বলুন সমস্যা নেই।(নীলা)
> তোমাকে দেখতে খুব ভালো লাগছিলো যখন তুমি হাসছিলে!
নীলার গাল দুটি লজ্জায় লাল হয়ে গেল আর চোঁখ দুটো পানিতে ভিজে গেল। গাড়িতে থাকতেও নীলার চিন্তা ছিলো তার স্বামী তাকে দেখার পর কেমন ব্যবহার করবে! আজ খুব আনন্দ লাগছে নিজের মধ্যে...
> আমার দিকে আর কতখন তাকিয়ে থাকবেন সড়ুন তরকারি পুড়ে যাচ্ছে!(নীলা)
নীলা শোয়াইকে সড়িয়ে দিয়ে নিজেই দাড়ালো চুলার সামনে। তার পাশেই তার স্বামী দাড়িয়ে আছে....
নীলা ভাবনার জগতেই হাড়িয়ে যায়, বাসর রাত নিয়ে নীলার অনেক ইচ্ছা ছিলো , ছাদে বসে স্বামীর বুকে মাথা রেখে চাঁদ দেখবে আর স্বামীর কাছে এতোদিনের না বলা সব কথাগুলো সে খুলে বলবে। কিন্তু তার স্বামীর বাড়িতে ছাদ নেই আছে টিনের চালা আর এখনো তার স্বামীর বুকে মাথা রেখে চাঁদ দেখাও হয়নি জোঁছনা বিলাস হয়নি। নীলার যতগুলো সপ্ন ছিলো একটিও সত্যি হয়নি কিন্তু তবুও আজ যেন নীলার জীবনের সব চেয়ে সুন্দর দিন। আজ যেন তার থেকে খুশি আর কেউ নেই। নীলা যেন পৃথিবীর সবটাই পেয়ে গেছে।
>...উফফফ...
> কী হলো! কী হয়েছে!(শোয়াইব)
> হাতে একটু ছেঁকা লেগেছে!(নীলা)
> এতো অসাবধান হলে চলে! আমিইতো করছিলাম। আর একটু ছেঁকা লেগেছে না!(শোয়াইব)
> ওতে কিছু হবে না! সমস্যা নাই ঠিক হয়ে যাবে।(নীলা)
> তুমি ঘরে যাও আর কিছু করা লাগবে না। সব রেডি আমি নিয়ে আসছি যাও..
শোয়াইব নীলাকে খাবার রুমে পাঠিয়ে দিলো। আসলে নীলা ভাবনায় অতল থাকায় অসাবধানতা বসত তার হাতটা একটু পুড়েঁ যায়।
নীলা চুপচাপ খাবার খাবার ঘরে আসে। খাবারগুলো টেবিলে রাখলো। শোয়াইব নীলার পাশেই বসলো...
নীলার হাত এখনো জ্বলছে আর নীলা নিজের হাত পানিতে ভিজাচ্ছে...
> আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন..(নীলাকে দেখে বললো শোয়াইব)
> মানে আমার হাত পুড়ে যাওয়াতে আপনি খুশি!(নীলা)
> হুম কিছুটা তাই।
> মানে!!!(নীলা অবাক হয়ে)
> মানে আমার ইচ্ছা ছিলো আমার বউকে আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিবো কিন্তু চিন্তায় ছিলাম কিভাবে বলি! আর এখন আল্লাহ তায়ালা একটা ওসিলা দিয়ে দিয়েছেন। (বলেই শোয়াইব হাসতে লাগলো)
নীলা লজ্জায় চুপচাপ বসেই রইলো...
এরপর শোয়াইব একটি প্লেটে খাবার নিয়ে নীলাকেও খাইয়ে দিচ্ছিলো আর নিজের খাচ্ছিল।
নীলা একই ভাবে তার স্বামীর দিকে তাকিয়েই আছে! প্রথম দিনেই যেন কতটা আপন হয়ে গেছে তারা! নীলার চোঁখে পানি চলে আসলো!
> একি তোমার ঝাঁল লাগলো নাকি!
> আজকের দিনটির কথা সপ্নেও ভাবিনি আমি! আল্লাহর কাছে না চাইতেই অনেক কিছু পেয়ে গেলাম আলহামদুলিল্লাহ্ ।(নীলা)
> তোমায় খাইয়ে দিচ্ছি এটা ছিলো সুন্নাত। এটাও ইসলামের একটি বিধান। জীবনের যেখানেই তুমি ইসলাম মানবে সেখানেই শান্তি। কেননা ইসলাম শান্তির ধর্ম এটায় দুনিয়াতেও শান্তি আর আখিরাতেও।
নীলা নিজের চোঁখের পানি মুছে নিয়ে খাবার খেতে লাগলো...
খাওয়া শেষে....
> একটু বাহিরে ঘুড়তে যাবা!
> এতো রাতে!(নীলা)
> আরে চলো..
নীলা একটি চাদর নীলা তার স্বামীর পিছনেই হাটতে লাগলো। নতুন বাড়ির কিছুই চিনে না সে...
বাড়ীর বাহিরে চাঁদের জোছনায় চারপাশ খুব সুন্দর লাগছে। নীলা দেখলো বাড়ির এড়িয়াটা অনেক বড় এবং চারপাশই ঘিড়ে রাখা। একপাশে বিভিন্ন ধরনের গাছ আর তার পাশেই ছোট একটা ফুলের বাগান। অন্ন পাশে একটি পুকুর।
নীলাকে নিয়ে তার স্বামী একটি দোলনায় বসলো যা ফুল বাগানটির পাশেই ছিলো...
নীলা চারপাশের দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলো চাঁদের আলোয়....
> আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো! কিছু মনে করবেন নাতো!(নীলা)
> হুম বলো!
> আপনাদের বাড়ির জায়গা বেশ অনেকটাই কিন্তু বাড়িটা বড় করলেন না কেন!(নীলা)
> (নীলার কথা শুনে শোয়াইব মুচকি হেঁসে বললো) এই কথা! আচ্ছা শোনো। তোমার কি কোনো ফুপুবাড়ি আছে!
> হুম আছে।(নীলা)
> মনে কর তুমি তোমার ফুপুবাড়ী বেড়াতে আসছো। এখানে তুমি মাত্র দুইদিন থাকবা। তো এখানে থাকার জন্য তো তুমি পাঁচতলা বাড়ি বানাবে তাই না!
> আজব আমি ওখানে গিয়ে বাড়ি বানাবো কেন!(নীলা)
> ওখানে থাকা নিয়ে তোমার ফুপাতো ভাই-বোনের সাথে ঝগরা করবা আর বেশি সমস্যা করলে খুনও করবা তাই না!
> আপনি কি বলছেন এগুলো! আমি এসব কেন করবো!(নীলা)
> কেন যখন মানুষের কিছু থাকেনা তখন তো সে এগুলোই করে। আর তোমার ফুপুবাড়ীতে তো তোমার নিজের কিছুই নেই! তুমি কেন করবে না!
> আমি কি সেখানে চিরদিন থাকতে যাবো! আমি কিছুদিন থাকবো তারপর আবার চলে আসবো তাই ওখানে ওগুলোর কোনো দরকারই নাই।(নীলা)
> নীলা তুমি বললে যদি কোথাও মেহমান হয়ে যায় তো সেখানে তোমার কোনো বাড়ি বানানো লাগে না, কোনো সম্পদ বাড়ানো লাগে না, কোনো কিছু নিয়ে কারো সাথে ঝগড়া করা লাগেনা। কারণ আমরা সেখানে কিছুদিন থাকি তারপর আবার আমাদের আসল ঠিকানায় ফিরে আসি। সেখানে আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে সময় কাটানোর , আনন্দ করার। তাহলে তোমার কি কখনো মনে হয়নি যে আমরা এ পৃথিবীতে মেহমান!
নীলা তার স্বামীর কথা শুনে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে....
> একটু চিন্তা করে দেখোতো কোথায় তারা যাদের পাহাড় পরিমান সম্পদ ছিল, কোথায় তারা যারা একসময় বিলাসিত দিন পার করেছে! তারা ঐ মাটির নিচেই শুয়ে আছে যেখানে দরিদ্র, দিন-মজুর, কৃষক এবং রাস্তার ফকির মানুষও শুয়ে আছে। মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য কখনোই সম্পদ অর্জন নয়। কারণ আজ পর্যন্ত এই সম্পদ তার কোনো কাজেই আসেনি। দুনিয়া আমাদের ঠিকানা নয়। এখানে আমরা মেহমান। আজ আছি তো কাল চলে যাবো। তাহলে বলো কেন আমি সম্পদ নিয়ে দৌড়া-দৌড়ি, মাড়া-মাড়ি, খুন ইত্যাদি কেন কবরো! আমাদের পিতা-মাতা(আদম-হাওয়া) তো জান্নাতী ছিলেন। আমরা কেন আমাদের সেই স্থায়ী ঠিকানার পথ অর্থাৎ জান্নাতের পথ খুঁজছি না!
নীলা তার স্বামীর কথাগুলো মন দিয়ে শুনছিলো। আসলে এভাবে তাকে কেউ বোঝায় নি। নীলা যেন অবাক দৃষ্টিতেই তার স্বামীর পানে তাকিয়ে আছে..
> কথা বুঝলেন!
> (স্বামীর প্রশ্নে ঘোড় ভাঙ্গে নীলার) না মানে আমি তো শুধু বাড়ী করার কথা বলছিলাম!(নীলা)
> এই বাড়ীর পেছনে বেশি টাকা খরচ করার মতো বোকামি পৃথিবীতে আর কিছুই নেই!
> মানে!(নীলা)
> ধরো ৪ জন মানুষের কাছে ৫ লাখ করে টাকা আছে। ১ম জন তার টাকা দিয়ে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তৈরি করলো , ২য় জন তার টাকা দিয়ে কিছু জমি ক্রয় করলো চাষ করার জন্য, ৩য় জন তার টাকাগুলো একজন গরীব মানুষকে ধার দিলো যেন সে কিছু একটা করে খেতে পারে আর ৪র্থ জন তার সম্পূর্ণ টাকা দিয়েই একটা বড় বাড়ী তৈরি করলো এবার বলো এখানে কোন ব্যক্তিতার টাকায় আর কোনো কাজই হবে না!(শোয়াইব)
(নীলা চিন্তায় পরে গেল আসলেই এখানে সব থেকে বাজে কাজটাই হচ্ছে বাড়ীর জন্য টাকা ব্যয়। কারণ যে ব্যবসা করছে তার ওখান থেকে কিছু আয় হয় , যে কৃষির জন্য জমি ক্রয় করলো সেটাও তার কাজে আসছে আর যে অন্যকে ধার দিলো সেও একসময় টাকাটা ফেরত পাবে আর যাকে ধার দিয়েছে সেও জীবিকার জন্য কিছু করতে পারবে। শুধুমাত্র বাড়ী বানানো টাকাটাই আর কোনো কাজে আসবে না।)
> জানো নীলা আমাদের রসুল (সা.) সব চেয়ে বেশি অপছন্দ করতেই বাড়ি বানানোর জন্য অর্থের অপচয়কে। তিনি ততকালীন রাস্ট্র পরিচালক ছিলেন কিন্তু কখনো পাকা বাড়ি তৈরীর ইচ্ছাও করেন নি। আমি তো তার থেকে অনেক বেশী অপচয় করে ফেলেছি....
.
.
চলবে....
✍️ Muhammad Abdullah Mina ✍️
কোন মন্তব্য নেই