নববর্ষ উদযাপন: এক ভয়ংকর অপসংস্কৃতি
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব। দরুদ ও সালাম নাজিল হোক প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর।
"নতুন বছর নতুন কল্যাণ বয়ে আনে,
দূরীভূত হয় পুরোনো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি "-
এধরনের কোন তত্ত্ব ইসলামে আদৌ সমর্থিত নয় , বরং নতুন বছরের সাথে কল্যাণের শুভাগমনের ধারণা আদিযুগের প্রকৃতি-পুজারী মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার অবশিষ্টাংশ। ইসলামে এ ধরনের কুসংস্কারের কোন স্থান নেই। বরং মুসলিমের জীবনে প্রতিটি মুহূর্তই পরম মূল্যবান হীরকখন্ড, হয় সে এই মুহূর্তকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করবে,
নতুবা আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে উঠবে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বছরের প্রথম দিনের কোন বিশেষ তাৎপর্য নেই। আর তাই তো ইসলামে হিজরী নববর্ষ পালনের কোন প্রকার নির্দেশ দেয়া হয়নি। না কুরআনে এর কোন নির্দেশ এসেছে, না হাদীসে এর প্রতি কোন উৎসাহ দেয়া হয়েছে, না সাহাবীগণ এরূপ কোন উপলক্ষ পালন করেছেন। এমনকি পয়লা মুহাররামকে নববর্ষের সূচনা হিসেবে গণনা করা শুরুই হয় নবীর (সা.) মৃত্যুর বহু পরে উমার ইবনুল খাত্তাবের (রা.) শাসন আমলে। এ থেকে বোঝা যায় যে, নববর্ষ ইসলামের দৃষ্টিতে কতটা তাৎপর্যহীন, এর সাথে জীবনে কল্যাণ-অকল্যাণের গতিপ্রবাহের কোন দূরতম সম্পর্কও নেই, আর সেক্ষেত্রে বাংলা নববর্ষের কিই বা তাৎপর্য থাকতে পারে ইসলামে?
কেউ যদি এই ধারণা পোষণ করে যে, নববর্ষের প্রারম্ভের সাথে কল্যাণের কোন সম্পর্ক রয়েছে, তবে সে শিরকে লিপ্ত হল, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করল। যদি সে মনে করে যে, আল্লাহ এই উপলক্ষ দ্বারা মানবজীবনে কল্যাণ বর্ষণ করেন, তবে সে ছোট শিরকে লিপ্ত হল। আর কেউ যদি মনে করে যে নববর্ষের আগমনের এই ক্ষণটি নিজে থেকেই কোন কল্যাণের অধিকারী, তবে সে বড় শিরকে লিপ্ত হল, যা তাকে ইসলামের গন্ডীর বাইরে নিয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই শিরক এমন অপরাধ যে, শিরকের ওপর কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে চিরতরে হারাম করে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন:
“.... নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর অংশী স্থাপন করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম; এবং এরূপ অত্যাচারীদের জন্য কোন সাহায্যকারী থাকবেনা। (আল-মায়িদাহ, ৫:৭২)
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী(সাঃ) বলেনঃ "কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের একটি দল আমার নিকটে আসতে চাইবে। কিন্তু তাদেরকে বাধা দেওয়া হবে। অতঃপর আমি বলবোঃ হে রব! ওরা আমার উম্মত। আল্লাহ তা'য়ালা বলবেনঃ তুমি জাননা এরা তোমার অবর্তমানে ধর্মের নামে নতুন নতুন বিদ'আত আবিষ্কার করেছে। নিশ্চয়ই এরা পশ্চাৎমুখী হয়ে মুরতাদ হয়েছিল।" (বুখারী, হাদীস নং- ৬৫৮৫)
কিন্তু এর পরই এই প্রশ্ন মনে জাগে যে তাহলে আজ 'বাংলা নববর্ষ ' উপলক্ষে এতো শুভেচ্ছা বিনিময় কেন? নাকি আমরাও অবচেতন ভাবে অন্যান্য সকলের মতোই নাসারা তথা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির দিকে ছুটে চলেছি।আর বাংলা নববর্ষ উদযাপন তো মুশরিকদের(হিন্দু) সংস্কৃতি আর তা তাঁদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত।
যদি তাই হয়,তাহলে এখনই আমাদের সাবধান হতে হবে।নতুবা হয়তো আজকের এই ছোট্ট শুভেছা আগামীতে বিদাতে আর আরো পরবর্তিতে শির্কে পরিনত হবে। আর এই পয়লা বৈশাখ এর উদযাপন অন্যান্য নববর্ষ উদযাপনের মত এক অপসংস্কৃতি। তাই এই বিষয়ে আমাদের তাকওয়া অবলম্বন করা উচিত। কারন জীবনমানের অপরিহার্য ও অনিবার্য গুণ হল তাকওয়া। এর অর্থ বেঁচে থাকা, সাবধানতা অবলম্বন করা ও (আল্লাহকে)ভয় করা।
সুতরাং চলুন আজ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনেই আল্লাহ নামে শপথ নিই আমরা কাউকেই কোনো নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাবনা।
আল্লাহ'র বাণীঃ
إِن تَكْفُرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَنِىٌّ عَنكُمْ ۖ وَلَا يَرْضٰى لِعِبَادِهِ الْكُفْرَ ۖ وَإِن تَشْكُرُوا يَرْضَهُ لَكُمْ ۗ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرٰى ۗ ثُمَّ إِلٰى رَبِّكُم مَّرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ۚ إِنَّهُۥ عَلِيمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُورِ
"তোমরা অকৃতজ্ঞ হলে আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন, তিনি তাঁর বান্দাদের অকৃতজ্ঞতা পছন্দ করেননা। যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তাহলে তিনি তোমাদের জন্য এটাই পছন্দ করেন। একের বোঝা অন্যে বহন করবেনা। অতঃপর তোমাদের রবের নিকট তোমাদের প্রত্যাবর্তন এবং তোমরা যা করতে তিনি তোমাদেরকে তা অবগত করাবেন। অন্তরে যা আছে তা তিনি সম্যক অবগত।"
(সূরাহ যুমার -৭)
হে আল্লাহ্ তায়ালা আমাদেরকে শির্ক মুক্ত করুন,আল্লাহ আমাদের দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান হাসিলের তৌফিক দান করুন, জীবিত অবস্থায় সমস্ত ভুল ত্রুটি সংশোধনের তৌফিক দান করুন। আমিন।