ইসলামের দৃষ্টিতে হালাল উপার্জন
হালাল বলতে আমরা সাধারণত: যাবতীয় বৈধ পন্থাকেই বুঝি। যা কল্যানকর ও হিতকর এবং যাবতীয় অবৈধ ও অকল্যাণকর হতে মুক্ত। ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ মানব জাতিকে উপার্জনের জন্যে উৎসাহ দিয়েই ক্ষান্ত হননি; বরং যাবতীয় বৈধ ও অবৈধ পন্থাও বাতলে দিয়েছেন। অতএব হালাল উপার্জন বলতে বুঝায় উপার্জনের ক্ষেত্রে বৈধ ও শরী‘আত সম্মত পন্থা অবলম্বন।
হালাল উপায়ে জীবিকা উপার্জনের ফলে সমাজ ব্যবস্থায় ধনী দরিদ্রের মাঝে সুষম ভারসাম্য ফিরে আসে; কৃষক দিন মজুর, ক্রেতা-বিক্রেতা, শ্রমিক-মালিক এবং অধস্তনদের সাথে উর্ধ্বতনদের সুদৃঢ় ও সংগতিপূণ সর্ম্পক তৈরী হয়। ফলে সকল শ্রেণীর নাগরিকই তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায় এবং সমাজ সংসারে নেমে আসে শান্তির সুবাতাস।
মূলত: ইসলাম যে পেশাকে অবৈধ বলে ঘোষনা করেছে সেসব পন্থায় উপার্জন ব্যতীত অন্যান্য পন্থায় উপার্জন করা বৈধ বলে বিবেচিত।[1] ইসলাম প্রদত্ত সীমারেখা ও মূলনীতি ঠিক রেখে বৈধ যে কোন পণ্যের ব্যবসা করার মাধ্যমে উপার্জনকে ইসলামী শরী‘আত হালাল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এছাড়া যদি কেউ বৈধ উপায়ে যোগ্যতানুযায়ী চাকুরী করে এবং ঘুষ সহ যাবতীয় অবৈধ লেন-দেন ও অসৎ মানসিকতা থেকে দুরে থাকে তবে সেটাও জীবিকার্জনের হালাল পন্থা হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
মহান আল্লাহ মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এটি শুধুমাত্র পাঁচ ওয়াক্ত নামায, রোযা, যাকাত প্রভৃতির উপরই সীমাবদ্ধ নয়। জীবন ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ রূপ রেখার প্রণেতা হিসেবে ইসলামে রয়েছে জীবন ধারনের যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক নির্দেশনা। এ দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে হালাল উপায়ে উপার্জনের ব্যবস্থা গ্রহণও অন্যতম একটি মৌলিক ইবাদত। শুধু তাই নয়, ইসলাম এটিকে অত্যাবশ্যক (ফরয) কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
এ মর্মে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদীস প্রনিধানযোগ্য। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‘‘ফরয আদায়ের পর হালাল পন্থায় উপার্জনও ফরয।’’[2]
উপর্যুক্ত হাদীসের মাধ্যমে প্রতিভাত হয় যে, ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব কতখানি এবং কোন ব্যক্তি যেন হারাম কোন পেশা অবলম্বন না করে উপরোক্ত হাদীসে সে মর্মেও অর্ন্তনিহীত নির্দেশ রয়েছে। পরকালীন জীবনে এ ফরয ইবাদতটি সম্পর্কে যে মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা যাবতীয় ফরয সম্পর্কে বান্দা জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব এটি ফরয কাজ সমূহের অন্তর্গত এক মৌলিক অত্যাশ্যকীয় ইবাদতে গণ্য হয়েছে।
উপার্জনের ক্ষেত্রে ইসলাম যেসব পন্থাকে হালাল করেছে সেগুলোর মূলনীতিসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো:
১.১ ব্যবসা বাণিজ্য
উপার্জনের ক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্য সব চেয়ে বড় সেক্টর। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি মহৎ পেশা। সমাজ জীবনে যার ক্রিয়াশীলতা ও প্রভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সুদূঢ় প্রসারী। ইসলাম ব্যবসা-বাণিজ্যকে শুধু বৈধ বলেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং এ ব্যাপারে সবিশেষ উৎসাহ ও গুরুত্ব প্রদান করেছে। যেন মুসলিম উম্মাহ পৃথিবীর বুকে একটি শ্রেষ্ট জাতি হিসেবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি ও স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন:
‘‘তিনি (আল্লাহ) ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।’’[3]
উপরোক্ত আয়াতের মর্ম উপলব্দিতে প্রতীয়মান হয় যে, সুদভিত্তিক লেন-দেনের মাধ্যমে যারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করছে তাদের মুকাবিলায় মহান আল্লাহ ব্যবসা-বাণিজ্যকে বৈধ বলে ঘোষনা দিয়েছেন। অতএব অবৈধ পন্থা হতে বাঁচার এবং প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধি লাভের এটি অনেক বড় অবলম্বণ। এছাড়াও জীবিকার একটি বৃহৎ অংশ রয়েছে এ ব্যবস্থাপনায়। মুরসাল হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
‘‘তোমরা ব্যবসা বানিজ্য কর। কারণ তাতেই নিহিত রয়েছে নয়-দশগোশত জীবিকা’’[4]
তাছাড়া সততা, বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়নতা, ধোঁকামুক্ত, কল্যাণমুখী মানসিকতাসম্পন্ন ব্যবসায়ীদের প্রশংসায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনেক হাদীস বিদ্যমান। এ ধরনের ব্যবসায়ীকে তিনি নবীগণ, ছিদ্দিক, ও শহীদদের সমমর্যাদাপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‘‘সৎ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যবসায়ী (পরকালে) নবী, সিদ্দিকীন ও আল্লাহর পথে জীবন বিসর্জনকারী শহীদদের সঙ্গী হবে।[5]
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইসলাম যেসব মূলনীতি দিয়েছে তাহলো: ধোঁকা ও প্রতারনামুক্ত, মিথ্যার আশ্রয় বিহীন, পণ্যের দোষ - গুণ স্পষ্ট থাকা, ভাল পণ্যের সাথে খারাপ পণ্যের মিশ্রণ না করা, মুনাফাখোরী মানোবৃত্তি পরিহার করে কল্যাণমুখী মানষিকতা পোষণ, মজুদদারি চিন্তা-চেতনা পোষণ না করা, ওজনে হের-ফের না করা, সর্বোপরি যাবতীয় শঠতা ও জুলুম থেকে বিরত থাকা।
১.২. চাকুরী
এটি জীবিকা নির্বাহে উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত। জনসংখ্যার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আমাদের দেশে সরকারী আধা-সরকারী, বেসরকারী, ব্যাংক-বীমা, এন.জি.ও. ও ব্যক্তিমালিকানাধিন এবং স্বায়ত্বশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। এসব চাকুরীর ক্ষেত্রে ইসলামের মূল দর্শন হলো প্রত্যেক চাকুরে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পূর্ণ নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সচ্ছতার সাথে পালন করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ের মূলনীতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:
‘‘তোমাদের প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল। তোমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’’[6]
তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই সকলকে যাবতীয় অনিয়ম, দুর্নীতি যেমন ঘুষ গ্রহণ, স্বজনপ্রীতি অন্যায়ভাবে কাউকে সুযোগ সুবিধা (undue Facilities) দান, কারো প্রতি জুলুম করা প্রভৃতি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি-পরায়ণদের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।[7] এছাড়াও কর্তব্যে অবহেলা, অনিয়মানুবর্তিতা ও কার্যে উদাসীনতার দরুন চাকুরীজীবিদের উপার্জন অনেক সময় বৈধতা হারিয়ে ফেলে। আমাদের দেশে দেখা যায় অনেক স্কুল-কলেজের শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে পাঠ দানের পরিবর্তে টিউশনী ও কোচিং সেন্টারের প্রতি বেশী ঝুকে পড়েছেন। অনেক ডাক্তার হাসপাতালে রোগী না দেখে ক্লিনিকে জমজমাট ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। যা কর্তব্যে অবহেলার নামান্তর। তারা যদি স্বীয় দায়িত্ব যথাযথ ও পূর্ণভাবে পালন করার পর অতিরিক্ত সময় এসব কাজ করেন তবে তা দোষের নয়।
১.৩.কৃষিকর্ম
কৃষিকর্ম জীবিকা নির্বাহে অন্যতম উপার্জন মাধ্যম। ইসলাম এটিকে মহৎ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কৃষিকার্যের সুচনা হয়েছে আদিপিতা আদম আলাইহিস সালাম থেকেই তাঁকে কৃষি কার্য, আগুনের ব্যবহার ও কুটির শিল্প শিক্ষা দেয়া হয়েছিল।[8] পর্যায়ক্রমে এ ব্যবস্থার উন্নতি সাধিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ মানবজাতির কল্যাণে এ ব্যবস্থাকে সাব্যস্ত করেছেন।[9]
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের অধিকাংশ লোকই কৃষি নির্ভর জীবিকা নির্বাহ করে। অথচ ইসলামের কৃষিনীতি সম্পর্কে অবগত হয়ে যদি কেউ তাঁর এ ব্যবস্থাপনায় ইসলামী নীতি অনুসরণ করে তবেই তা হালাল উপার্জন হবে। আর সেগুলো হলো:
ক. ভূমির মালিক নিজেই চাষ করবে। এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
‘‘যার জমি রয়েছে সে নিজেই চাষাবাদ করবে।’’[10]
তবে এক্ষেত্রে কারো জমি অন্যায়ভাবে অধিকারে আনে কিংবা উত্তরাধিকারকে অংশ না দিয়ে চাষ করলে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।[11]
অথবা, মজুরের দ্বারা নিজের তত্বাবধানে চাষ করবে অথবা কোন ভূমিহীনকে চাষাবাদ ও ভোগদখল করতে দিবে।
খ. উৎপন্ন ফসলের নির্দিষ্ট অংশ দেয়ার শর্তে কাউকে চাষ করতে দেয়া।
খ. উৎপন্ন ফসলের নির্দিষ্ট অংশ দেয়ার শর্তে কাউকে চাষ করতে দেয়া।
গ. প্রচলিত বাজার দর অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ নগদ টাকার বিনিময়ে কাউকে এক বছরের জন্য তার ভোগাধিকার দান করা।[12]
ঘ. জমিতে হারাম দ্রব্য উৎপাদন না করা, যাতে ক্ষতিকর কোন উপাদান রয়েছে্ যেমন: আফিম, গাঁজা, চারস বা অনুরূপ মাদক দ্রব্য।[13]
ঙ. অংশীদারিত্ব চাষাবাদ যাবতীয় প্রতারণা, ধোঁকা, ঠকবাজি, ও অজ্ঞতা থেকে মুক্ত থেকে ন্যায়পরায়নতা ও ইনসাফ ভিত্তিক নীতির লালন করতে হবে।
আল্লামা মাওয়ারদী উল্লেখ করেছেন যে, উৎপাদনের মূল উপাদান দু’টি, এক. কৃষি, দুই. ব্যবসা-বানিজ্য। তবে এদুয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও পবিত্রতম হলো কৃষি।[14]
ইসলামে মানুষের অর্থ-সম্পদ লাভের তিনটি নৈতিক পন্থা নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে। আর তা হলো:
১. পরিশ্রম:
পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষ অর্থ সম্পদ উপার্জন করতে পারে। সে সঙ্গে মেধা ও যোগ্যতার সমন্বয়ে মানুষ অর্থের পাহাড় গড়তে সক্ষম হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহর নিকট ঐ জীবিকাই উত্তম যা মানুষ নিজ হাতে উপার্জন করে। এভাবে শ্রমদানের ক্ষেত্রও বহুবিধ ও বিচিত্র ধরনের। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
২. শিল্পকর্ম:
ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি শিল্পকর্মও মানুষের অন্যতম পেশা। এ মহতি পেশায় জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিয়োজিত রয়েছে। এ কর্মটি সম্পর্কে ইসলাম যথেষ্ট গুরুত্বরোপ করেছে। যুগে যুগে প্রেরিত নবী-রাসূলগণ শুধু উৎসাহের বানী প্রদান করেই ক্ষান্ত হননি; বরং শিল্প ও ব্যবসার ময়দানে তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:
‘‘আমি তাঁকে (দাউদ আলাইহিস সালাম) বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম যাতে তা যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে।’’[15]
শিল্প শিক্ষাকে মহান আল্লাহ নিয়ামত হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এ-জন্য শুকরিয়া আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহর নবীগণ কোন না কোন শিল্পকর্মে নিয়োজিত ছিলেন। উপরোক্ত আয়াতে দাউদ আলাইহিস সালাম বর্ম শিল্পে নিয়োজিত ছিলেন বলে আভাস রয়েছে। এছাড়াও তিনি প্রথম জীবনে চাষী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি শষ্য বপন ও কর্তন করতেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে জমি মানুষের খিদমতের জন্য কোন কাজ করে তাঁর দৃষ্টান্ত মূসা আলাইহিস সালাম জননীর ন্যায়। তিনি নিজে সন্তানকে দুধ পান করিয়েছেন; আবার ফেরাউনের কাছ থেকে পাবিশ্রমিক পেয়েছেন। এছাড়া মূসা আলাইহিস সালাম মাদইয়ানে ৮ বছর চাকরী করছেন, নূহ আলাইহিস সালাম জাহাজ নির্মান করেছেন। যাকারিয়া আলাইহিস সালাম কাঠমিস্ত্রির কাজ করতেন। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাল্যকালে ছাগল চরাতেন, যৌবনে ব্যবসা করেছেন, চাকরী করেছেন, খন্দকের যুদ্ধে মাটি কেটেছেন, মাথায় বোঝা বহন করেছেন। কূপ থেকে পানি তুলেছেন, নিজ হাতে জামা ও জুতা সেলাই করেছেন, স্ত্রীকে ঘরে রান্নার কাজে সাহায্য করেছেন, এমনকি দুধ দোহনও করেছেন। এজন্য পেশা ক্ষুদ্র হোক, বৃহৎ হোক, তাতে কিছু আসে যায় না। নিজে পরিশ্রম করে শ্রমলব্দ আয়ে নিজের পরিবারবর্গের আস্বাদনের জন্য সংগ্রাম করা অতিশয় সম্মান ও পূণ্যের কাজ।
৩. উত্তরাধিকার:
উত্তরাধিকারসূত্রে মানুষ অর্থ সম্পদ লাভ করে থাকে। কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিগণ ইসলামের বিধান অনুযায়ী মৃতের পরিত্যক্ত স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি হতে যে সম্পদ লাব করে থাকে তা হালাল।
৪. হেবা বা দান:
কোন বিনিময় মূল্য বা প্রতিদান ব্যাতিরেকে কাউকে নিজের সম্পদের মালিকানা হস্তান্তর বা দান করা এবং যার অনুকুলে হস্তান্তর বা দান করা হয় সে ব্যাক্তি কর্তৃক তা গ্রহণ করাকে হেবা বলা হয়। হেবার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সম্পদ হালাল।
[1] . ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম পেশা হলো: অপ্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ, বেশ্যাবৃত্তি, নৃত্য ও যেনৈশিল্প, অবৈধ ব্যবসা-বানিজ্য যেমন, মুর্তি, অবৈধ পাণীয়, ভাষ্কর্য ও প্রতিকৃতি নির্মান শিল্প, সুফী কারবার, ওজনে কম দেয়া, ধোঁকা ও প্রতারণামূলক ব্যবসা, মিথ্যার আশ্রয় নেয়া, ও চাকুরী হতে অবৈধ উপার্জন যেমন ঘুষ গ্রহণ। [2] . আবূ বকর আহমদ ইবনুল হুসাইন আল-বায়হাকী, সুনান আল-বায়হাকী, সম্পাদনায়: আব্দুল কাদির আতা (মক্কা আল-মুকাররমা: মাকতাবাতু দারুল বায, ১৪১৪ হি/১৯৯৪ খ্রী.) খ. ৬, পৃ. ১২৮। ইমাম বায়হাকী বলেন, এর রাবী দুর্বল। [3] . সূরা আল-বাকারা: ২৭৫। [4] . গাযালী, ইহইয়াউ উলুমুদ্দীন, (মাকতবাতুল মুস্তফা আল বাবী ওয়াল হালবী) খ. ২, পৃ. ৬৪। ইমাম ‘ইরাকী বলেন: মুরসাল। [5] . ইমাম তিরমিযী, জামে’ আত্-তিরমিযী, হাদীস নং- ১২০৯। তবে আল্লামা আলবানী এটাকে দুর্বল বলেছেন। [6] .ইমাম বুখারী, সহীহ, হাদীস নং ৮৯৩ ; ইমাম মুসলিম, সহীহ, হাদীস নং ১৮২৯। [7] . ঘুষ গ্রহীতা ও দাতা উভয়ের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّاشِي وَالْمُرْتَشِي ‘‘ঘুষ দাতা ও গ্রহীতাকে আল্লাহ্র রাসূল লা‘নত করেছেন।” [ইমাম তিরমিযী, সুনান তিরমিযী, হাদীস নং ১৩৩৭; ইমাম আবু দাউদ, আসসুনান, ৩৫৮০] জুলুম, স্বজনপ্রীতি সংক্রান্ত হাদীস আসবে। [8] . ইসলামী বিশ্বকোষ, (ঢাকা: ই. ফা. বা. তা. বি.) খ. ১, পৃ. ২৪৩; ইবন খালদুন, মুবাদ্দমা, (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ১ম প্রকাশ, ১৯৮১) খ. ২, পৃ. ৭-৮। [9] . আল্লাহ তা’আলা বলেন: ﴿فَلۡيَنظُرِ ٱلۡإِنسَٰنُ إِلَىٰ طَعَامِهِۦٓ ٢٤ أَنَّا صَبَبۡنَا ٱلۡمَآءَ صَبّٗا ٢٥ ثُمَّ شَقَقۡنَا ٱلۡأَرۡضَ شَقّٗا ٢٦ فَأَنۢبَتۡنَا فِيهَا حَبّٗا ٢٧ وَعِنَبٗا وَقَضۡبٗا ٢٨ وَزَيۡتُونٗا وَنَخۡلٗا ٢٩ وَحَدَآئِقَ غُلۡبٗا ٣٠ وَفَٰكِهَةٗ وَأَبّٗا ٣١ مَّتَٰعٗا لَّكُمۡ وَلِأَنۡعَٰمِكُمۡ ﴾সূরা আবাসা: ২৪-৩২।) [10] . ইমাম বুখারী, সহীহ আল বুখারী, হাদীস নং - ২৩৪০। [11] . কেউ এক খন্ড জমি অন্যায়ভাবে অধিকারে নিলে কিয়ামতের দিন ঐ জমির সাত স্তবক পর্যন্ত তার কাঁধে ঝুলিয়ে দেয়া হবে। নবী (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির উপর আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। তাদের একজন হলো যে জমির আইল বা সীমানা পরিবর্তন করে ফেলে। ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল, আল-মুসনাদ (মিসর: মুয়াসসাতুল কুরতবা, তা. বি) খ. ৪, পৃ. ১০৩। [12] . মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামের অর্থনীতি, (ঢাকা: খায়রুন প্রকাশনী, ৪র্থ সংস্করণ, ১৯৮৭) পৃ. ১৫৮-১৫৯। [13] . রাসূল (সা.) বলেছেন, মাদক দ্রব্য উৎপাদনকারী, যে উৎপাদন করার, মদ্যপায়ী, বহনকারী, যার কাছে বহন কলে নেয়া হয়, যে পান করায়- পরিবেশনকারী, বিক্রয়কারী, মূল্য গ্রহণ ও ভক্ষনকারী এবং যার জন্য তা ক্রয় করা হয় । এ সকলের উপরই অভিশাপ। (আবূ দাউদ সুলাইমান ইবনুল আণআম আস-সিজিস্তানী। সুনান, সম্পাদনা: মহিউদ্দীন আবদুল হামিদ ) বৈরুত দারুল ফিকর, তা.বি) খ. ৩ পৃ. ২৪৪। [14] . আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রুপায়ন (ঢাকা: কওমী পাবলিকেশন্স ১ম সংস্করণ ১৪০৮ হি:/ ২০০১ খ্রী:) পৃ. ১৭৯। [15] . সূরা আল-আম্বিয়া: ৮০।
【গ্রন্থঃ ইসলামে হালাল উপার্জন : গুরুত্ব ও তাৎপর্য
অধ্যায়ঃ ইসলামে হালাল উপার্জন
লেখকঃ ড. মোঃ আব্দুল কাদের 】
কোন মন্তব্য নেই