মহরম মাস ও আশুরা



মহরম মাস ও আশুরা

আশুরা শব্দটি শুনতেই সাধারণ মানুষের গা যেন শিউরে ওঠে,কারন আশুরা বলতেই তাদের ধারণা কারবালা। আর কারবালার অর্থ নবী (সাঃ)-এর নাতি ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ)-এর স্বপরিবারে মর্মান্তিক শাহাদাতের ঘটনা।
কিন্তু আসলে আশুরার অর্থ দশ তারিখ।অর্থাৎ মহরমের আশুরা হল চন্দ্র বছরের প্রথম মাস মহরমের দশম তারিখ। আল্লাহ তা'য়ালা ১২ টি মাসের মধ্যে ৪ টি মাসকে যথা: যিলক্কদ, যিলহজ্ব, মহরম, ও রজব মাসকে হারাম তথা সম্মানিত মাস করেছেন।

আল্লাহ তা'য়ালার বাণীঃ
"নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর বিধানে মাস গণনায় বারটি। এর মধ্যে বিশেষ রূপে চারটি মাস হচ্ছে সম্মানিত। এটাই হচ্ছে সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম। অতএব তোমরা এ মাসগুলিতে (ধর্মের বিরুদ্ধাচরণ করে) নিজেদের ক্ষতি সাধন করনা, আর মুশরিকদের বিরুদ্ধে সকলে একযোগে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে সকলে একযোগে যুদ্ধ করে। আর জেনে রেখ যে, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।"
(সূরা তাওবাঃ আয়াত- ৩৬)
আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বা ও ইবনু নুয়ামর (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, জাহিলী যুগে লোকেরা আশূরার দিন সিয়াম পালন করত। রমযানের সিয়াম ফরয হওয়ার পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ এদিন সিয়াম পালন করেছেন। যখন রমযানের সিয়াম ফরয হল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আশূরার দিন আল্লাহর দিনসমূহের একটি দিন। সুতরাং যার ইচ্ছা সে এ দিন সিয়াম পালন করবে, আর যার ইচ্ছা সে তা ছেড়ে দেবে।
(সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ১৪/ সিয়াম (রোজা), হাদিস নম্বরঃ ২৫১৩)

★ আশুরার ফজিলত 

পূর্বেই বলাহয়েছে হিজরি সালের ১২ টি মাসের ৪ টি হারাম (সম্মানিত) মাস । যিলকদ, জিলহজ্ব, মহরম, ও রজব। প্রথম হারাম মাস মহরম ও শেষ হারাম মাস জিলহজ্ব এবং মধ্যখানের হারাম মাস রজব।
আশুরার দিন নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ দিন। এই দিন আমাদেরকে এক ঐতিহাসিক ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দ্বীন হেফাজতের উদ্দেশ্যে হিজরত ও হক প্রতিষ্ঠার জন্য এক মহান দিন। আর এই জন্যই দিনটিকে বিশেষ এক ইবাদত সিয়াম (রোজা) -এর সাথে প্রতিটি মুসলিমের স্মরণ করা উচিত।
■ এই দিনে মুসা(আঃ) ও বনি ইসরাঈলের নাজাত ও 'ফেরাউন ও তার সাঙ্গপাঙ্গ' -এর ধ্বংস :-
আল্লাহ তা'আলা তাঁর রসুল মুসা(আঃ) কে ও বনি ইসরাঈলকে ফেরাউনের জুলুম থেকে এ দিনে নাজাত দেন এবং ফেরাউন ও তার সাঙ্গপাঙ্গকে বাহারে কালজুম তথা লোহিত সাগরে ডুবিয়ে হালাক -ধ্বংস করেন।
● আল্লাহ তা'য়ালার বাণীঃ
"এবং যখন আমি তোমাদের জন্য সমুদ্রকে বিভক্ত করেছিলাম, অতঃপর তোমাদেরকে উদ্ধার করেছিলাম ও ফির‘আউনের স্বজনদেরকে নিমজ্জিত করেছিলাম এবং তোমরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে।"
(সূরা বাকারাঃ আয়াত- ৫০)
● আল্লাহ তা'য়ালার বাণীঃ
"আর আমি বানী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করে দিলাম, অতঃপর ফির‘আউন তার সৈন্যদলসহ তাদের পশ্চাদানুসরণ করল যুলম ও নির্যাতনের উদ্দেশ্যে; এমনকি যখন সে নিমজ্জিত হতে লাগল তখন বলতে লাগলঃ আমি ঈমান এনেছি বানী ইসরাঈল যাঁর উপর ঈমান এনেছে, তিনি ছাড়া অন্য মা‘বূদ নেই এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছি।
এখন ঈমান আনছ? অথচ পূর্ব (মুহুর্ত) পর্যন্ত তুমি নাফরমানী করছিলে এবং বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।
অতএব আমি আজ তোমার লাশকে উদ্ধার করব, যেন তুমি তোমার পরবর্তী লোকদের জন্য উপদেশ গ্রহণের উপকরণ হয়ে থাক; আর প্রকৃত পক্ষে অনেক লোক আমার উপদেশাবলী হতে উদাসীন রয়েছে।"
(সূরা ইউনুসঃ আয়াত- ৯০-৯২)

ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদীগণ ‘আশূরার দিনে সওম পালন করে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ কি ব্যাপার? (তোমরা এ দিনে সওম পালন কর কেন?) তারা বলল, এ অতি উত্তম দিন, এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর কবল হতে নাজাত দান করেন, ফলে এ দিনে মূসা (আঃ) সওম পালন করেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন (সাঃ) আমি তোমাদের অপেক্ষা মূসার অধিক নিকটবর্তী, এরপর তিনি এ দিনে সওম পালন করেন এবং সওম পালনের নির্দেশ দেন।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ), অধ্যায়ঃ ৩০/ সাওম/রোযা, হাদিস নম্বরঃ ২০০৪;
আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৬৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৮৭৫)

■ নবী (সাঃ) এ দিনের সিয়াম (রোজা) অন্যান্য দিনের বেশি অনুসন্ধান করতেনঃ-
ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ‘আশূরার দিনের সওমের উপরে অন্য কোন দিনের সওমকে প্রাধান্য প্রদান করতে দেখিনি এবং এ মাস অর্থাৎ রমাযান মাস (এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব প্রদান করতেও দেখিনি)।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ), অধ্যায়ঃ ৩০/ সাওম/রোযা, হাদিস নম্বরঃ ২০০৬)
(মুসলিম ১৩/১৯, হাঃ ১১৩২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৬৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৮৭৭)

■ এই দিনের রোজা রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পূর্বে ফরজ ছিলঃ-
‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে কুরাইশগণ ‘আশূরার সওম পালন করত এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ও এ সওম পালন করতেন। যখন তিনি মদিনায় আগমন করেন তখনও এ সওম পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমাজানের সওম ফরজ করা হল তখন ‘আশূরার সওম ছেড়ে দেয়া হলো, যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না।
(সহীহ বুখারী (তাওহীদ), অধ্যায়ঃ ৩০/ সাওম/রোযা, হাদিস নম্বরঃ ২০০২; আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৬১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১৮৭৩)

★ আশুরার রোজার মর্যাদা

যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে জিজ্ঞাসা করা হল, ফরয সালাতসমূহের পর কোন সালাত এবং রমযান মাসের সিয়ামের পর কোন সাওম (রোজা/সিয়াম) সর্বোত্তম? তিনি বললেন, ফরয সালাতসমূহের পর গভীর রাতের সালাত সর্বোত্তম এবং রমযান মাসের সিয়ামের পর আল্লাহর মাস মহরমের সাওম (রোজা/
সিয়াম) সর্বোত্তম।
(সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ১৪/ সিয়াম (রোজা), হাদিস নম্বরঃ ২৬২৭)

■ এ দিনের রোজা গত এক বছরের পাপকে (সগিরা গুনাহ বা ছোট পাপ) মিটিয়ে দেয়ঃ-

আবু কতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রসুলাল্লাহ (সাঃ) কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন:"আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট আশা করছি যে, তিনি বিগত এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দেবেন। "
(সহীহ মুসলিম হাদিস নং: ১৯৭৬)

আশুরার রোজা রাখার নিয়ম 

আশুরার রোজা হলো মহরম মাসের দশম তারিখে কিন্তু সাথে সাথে নবম তারিখেও রোজা রাখা সুন্নত; যাতে ক'রে ইহুদি-খ্রীষ্টান দের সাথে সাদৃশ্য না থাকে। আর ইহাই হল সর্বোত্তম যা সাহাবা কেরাম নবী (সাঃ) -এর মৃত্যুর পর করতেন।

হাসান ইবনু আলী দাওয়ানী (রহঃ) ... আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আশূরার দিন সিয়াম পালন করেন এবং লোকদেরকে সিয়াম পাননের নির্দেশ দেন তখন সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইয়াহূদী এবং নাসারা এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনশাআল্লাহ আগামী বছর আমরা নবম তারিখেও সিয়াম পালন করব। কিন্তু পরের বছর আশুরা আসার পূর্বেই রসুলাল্লাহ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করেন।"
(মুসলিম হাদিস নং: ১৯১৬)(সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ১৪/ সিয়াম (রোজা), হাদিস নম্বরঃ ২৫৩)

কতিপয় বিষয় 

■ উপরোক্ত হাদিসগুলি প্রমাণ করে আশুরার রোজা হাসান(রাঃ) বা হুসাইন(রাঃ) এর মৃত্যু উপলক্ষে নয়। বরং এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত এবং এই রোজা মুসা(আঃ) থেকে প্রাপ্ত।
■ যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোজা রেখেছেন তখন হাসান(রাঃ) ও হুসাইন(রাঃ) জীবিত ছিলেন।
■ ইসলামে জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবস পালন নিষিদ্ধ। সুতরাং আশুরার দিনে হুসাইন(রাঃ)-এর মৃত্যুদিবস পালন করা হারাম।
■ অনেকেই এই কথা বলে থাকেন যে- 'হাসান(রাঃ) ও হুসাইন(রাঃ) ইসলামের জন্যে শাহাদাত বরণ করেছেন ; তাই আমরা আশুরার দিনে শোক পালন করি'।
সমগ্র মুসলিম জাতি হাসান(রাঃ) ও হুসাইন(রাঃ) মৃত্যুতে মর্মাহত। কিন্তু পূর্বেই বলা হয়েছে ইসলামে জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবস পালন নিষিদ্ধ। আবার ইসলামের ইতিহাসে মুহাম্মদ(সাঃ)-এর পরেই যে। চারজন খালিফার স্থান রয়েছে তাঁদের মধ্যে উমর(রাঃ), উসমান(রাঃ) ও আলী(রাঃ) এরা তিনজনেই ইসলামের জন্যে শাহাদাত বরণ করেছেন। তাঁদের জন্য বিদাতিদের শোক দিবস কোথায়???
■ আল্লাহ তায়ালা, মুহম্মদ(সাঃ) এর মাধ্যমে দ্বীন-ই- ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।সুতরাং তারপরে ইসলামের মধ্যে নতুন কোনো কিছুই আসতে পারেনা। যদি মুহম্মদ(সাঃ) এর দেওয়া নির্দেশের বাইরে নতুন কোনো বিধি-বিধান বা ইবাদত ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করে তবে তা ইসলামের অঙ্গ হিসাবে গ্রহণ করা যাবেনা।
আবূ জা'ফর মুহাম্মদ ইবনু সাব্বাহ ও আবদুল্লাহ ইবনু আওন হিলালী (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মীয় ব্যাপারে এমন বিষয় উদ্ভাবন করে যা তাতে নেই, তা পরিত্যাজ্য।
(সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৩১/ বিচার বিধান, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৪৩)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবায় বলেতেনঃ
"•••আমি প্রেরিত হয়েছি এমন অবস্থায় যে, আমি ও কিয়ামত এ দুটির ন্যায় এবং মধ্যম অংগুলী ও শাহাদাত অংগুলী মিলিয়ে দেখাতেন। বলতেন, উত্তম বাণী হল আল্লাহ তা'আলার কিতাব এবং সর্বোত্তম হিদায়াত হল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিদায়াত। নিকৃষ্ট বিষয় হলো বিদআত (দ্বীনে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়সমূহ।) সকল বিদআতই হল পথভ্রষ্টতা।•••"
(সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৮/ জুমু’আ, হাদিস নম্বরঃ ১৮৭৮ )
■ তাহলে প্রশ্ন হলো মুহম্মদ(সাঃ) কি হাসান(রাঃ) ও হুসাইন(রাঃ) মৃত্যু উপলক্ষে আশুরার দিন শোক পালন করতেন? উত্তর অবশ্যই 'না'। কারণ মুহম্মদ(সাঃ) মৃত্যু ১১ হিজরীতে অর্থাৎ ৬৩২ ঈশাইতে। আর হাসান(রাঃ)-এর মৃত্যু ৫০ হিজরীতে ৬৭০ অর্থাৎ ঈশাইতে এবং হুসাইন(রাঃ)-এর মৃত্যু ৬১ হিজরীতে অর্থাৎ ৬৮০ ঈশাইতে। অর্থাৎ কিনা মুহম্মদ(সাঃ) মৃত্যুর প্রায় ৩৯ বছর পর হাসান(রাঃ)-এর মৃত্যু হয় এবং ৫০ বছর পর হুসাইন(রাঃ) এর মৃত্যু হয়।
সুতরাং এটা পরিষ্কার যে হাসান(রাঃ) ও হুসাইন(রাঃ) মৃত্যু উপলক্ষে আশুরার দিন শোক পালন ইসলামের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এটি ইসলাম বহির্ভুত বিষয়। তাহলে এত ধুমধাম, এত তাজিয়া, এত পতাকা, এত অস্ত্রের নিস্ফল আস্ফালন, আলোর বন্যা কিসের জন্য !!!???

■ মহরম মাসের এই বিদআত অনেক সময় শিরকের রূপ নেয়। কিছু লোকদের বলতে দেখা যায় 'ইয়া আলী', 'ইয়া হুসেইন'। অর্থাৎ আলী বা হুসেইনের কাছে দোয়া(প্রার্থনা) করে।
অথচ হাদীসে এসেছে "দোয়া হল ইবাদত"।
(সুনানে আবু দাউদ-১৪৬৫)
আর এই ব্যাপারটা আমাদের সকলের বোঝা উচিত যে ইবাদত কেবল মাত্র আল্লাহর জন্য, অন্য কারো জন্য নয়। আর দোয়া যখন ইবাদত তখন দোয়াও কেবল মাত্র আল্লাহর জন্য, অন্য কারো জন্য নয়।
আল্লাহ তা'আলা বলেন-
"বলঃ তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তাদের কথা ভেবে দেখেছ কি? তারা পৃথিবীতে কি সৃষ্টি করেছে আমাকে দেখাও অথবা আকাশমন্ডলীতে তাদের কোন অংশীদারীত্ব আছে কি? পূর্ববর্তী কোন কিতাব অথবা পরম্পরাগত কোন জ্ঞান থাকলে তা তোমরা আমার নিকট উপস্থিত কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বিভ্রান্ত কে যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কিয়ামাতের দিন পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দিবেনা? এবং তারা তাদের প্রার্থনা সম্বন্ধে অবহিত নয়।
যখন কিয়ামাত দিবসে মানুষকে একত্রিত করা হবে তখন তারা হবে তাদের শত্রু, তারা তাদের ইবাদাত অস্বীকার করবে।"
(সূরা আহ্কাফঃ আয়াত-৪,৫,৬)

আর আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা শিরক।
আল্লাহ্ তা'য়ালা এরশাদ করেন-
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺃَﻥ ﻳُﺸْﺮَﻙَ ﺑِﻪِۦ ﻭَﻳَﻐْﻔِﺮُ ﻣَﺎ ﺩُﻭﻥَ ﺫٰﻟِﻚَ ﻟِﻤَﻦ ﻳَﺸَﺎٓﺀُ ﻭَﻣَﻦ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻘَﺪْ ﺿَﻞَّ ﺿَﻠٰﻠًۢﺎ ﺑَﻌِﻴﺪًﺍ
"নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী স্থাপনকারীকে ক্ষমা করেননা এবং এতদ্ব্যতীত তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে থাকেন; এবং যে আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করে সে নিশ্চয়ই চরমভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল।"
(সূরা নিসা:আয়াত-১১৬)
সুতরাং আমাদের উচিত ইসলামী তরীকায়, মুহম্মদ(সাঃ)-এর সুন্নত হিসাবে আশুরার দিনটি পালন করা। আর ইনশাল্লাহ তা'আলা এই দিনটি আমরা মুহম্মদ(সাঃ)-এর সুন্নত হিসাবেই পালন করব।
আল্লাহ আমাদের মধ্য থেকে শির্ক বিদাত সমূহ দূরিভূত করার তৌফিক দান করুন। কেবল মাত্র মুহম্মদ(সাঃ)-এর প্রদর্শিত পথেই আমল করার তৌফিক দান করুন। আল্লাহ তা'আলা আমাদের " সীরাতে মুস্তাকিম "(সরল পথ) প্রদর্শন করুন। পরকালে জান্নাতুল ফিরদৌস প্রদান করুন।
আমিন।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.