ফরজ সালাতের পর জিকরসমূহ



পরম করুণাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি। সমস্ত প্রশংসায় আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁর ইবাদাত করার জন্য।
দরুদ ও সালাম নাজিল হোক প্রিয় নবী মুহাম্মদ(সাঃ) এর উপর।
আজকের আলোচনা ফরজ সালাতের পর জিকর গুলি সম্পর্কে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ন সুন্নাত। কিন্তু আমাদের দেশে বেশিরভাগ মুসলিমই চরম অবহেলাই এই সুন্নাতটি ত্যাগ করি অথবা এই সম্পর্কে অবহিতই নয়। আসুন আমরা জেনে নিই ফরজ সালাতের পর আমরা কি কি জিকর করবো:-

সালাম ফিরানোর পর যিকর #১

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ

আমি আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

আস্তাগফিরুল্লা-হ

اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ، وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ

হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়। আপনার নিকট থেকেই শান্তি বর্ষিত হয়। আপনি বরকতময়, হে মহিমাময় ও সম্মানের অধিকারী!

আল্লা-হুম্মা আনতাস্ সালা-মু ওয়া মিনকাস্ সালা-মু তাবা-রক্তা ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরা-ম

মুসলিম ১/৪১৪, নং ৫৯১

★ সালাম ফিরানোর পর যিকর #২

তিনবার বলবে,

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ،

একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর।

তারপর,

اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الجَدُّ

হে আল্লাহ, আপনি যা প্রদান করেছেন তা বন্ধ করার কেউ নেই, আর আপনি যা রুদ্ধ করেছেন তা প্রদান করার কেউ নেই। আর কোনো ক্ষমতা-প্রতিপত্তির অধিকারীর ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি আপনার কাছে কোনো উপকারে আসবে না।

আল্লা-হুম্মা লা মানি‘আ লিমা আ‘তাইতা, ওয়ালা মু‘তিয়া লিমা মানা‘তা, ওয়ালা ইয়ানফা‘উ যালজাদ্দি মিনকাল জাদ্দু

বুখারী ১/২২৫, নং ৮৪৪; মুসলিম ১/৪১৪, নং ৫৯৩

★ সালাম ফিরানোর পর যিকর #৩

لَا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَلاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ، لَا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الكَافِرُونَ

একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি নেই। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করি, নেয়ামতসমূহ তাঁরই, যাবতীয় অনুগ্রহও তাঁর এবং উত্তম প্রশংসা তাঁরই। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, আমরা তাঁর দেয়া দ্বীনকে একনিষ্ঠভাবে মান্য করি, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে

লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়ালা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যাহু। লাহুন নি‘মাতু ওয়া লাহুল ফাদলু, ওয়া লাহুসসানাউল হাসান। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসীনা লাহুদ-দীন ওয়া লাও কারিহাল কাফিরূন

মুসলিম ১/৪১৫, নং ৫৯৪।

★ সালাম ফিরানোর পর যিকর #৪

পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও তা সমুদ্রের ফেনারাশির মত হয়

প্রত্যেকটি ৩৩ বার করে বলবে,

سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহ কতই না পবিত্র-মহান। সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। আল্লাহ সবচেয়ে বড়।

সুবহা-নাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লা-হু আকবার

তারপর বলবে,

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।

লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর

মুসলিম, ১/৪১৮, নং ৫৯৭

★ সালাম ফিরানোর পর যিকর #৫

কুরআনের শেষ তিন সূরা প্রত্যেক সালাতের পর একবার

সূরা ইখলাস

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ﴿١﴾ اللَّهُ الصَّمَدُ ﴿٢﴾ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ﴿٣﴾ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ ﴿٤﴾

রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। বলুন, তিনি আল্লাহ্, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ্ হচ্ছেন ‘সামাদ’ (তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী)। তিনি কাউকেও জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয় নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। ক্বুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ। আল্লাহুস্ সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ

সূরা আল-ফালাক

قُلْ أَعُوذُ بِرَ‌بِّ الْفَلَقِ ﴿١﴾ مِن شَرِّ‌ مَا خَلَقَ ﴿٢﴾ وَمِن شَرِّ‌ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ ﴿٣﴾ وَمِن شَرِّ‌ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ ﴿٤﴾ وَمِن شَرِّ‌ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ ﴿٥﴾

রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে। ‘আর অনিষ্ট হতে রাতের অন্ধকারের, যখন তা গভীর হয়। আর অনিষ্ট হতে সমস্ত নারীদের, যারা গিরায় ফুঁক দেয়। আর অনিষ্ট হতে হিংসুকের, যখন সে হিংসা করে।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। ক্বুল আ‘উযু বিরব্বিল ফালাক্ব। মিন শাররি মা খালাক্ব। ওয়া মিন শাররি গা-সিক্বিন ইযা ওয়াক্বাব। ওয়া মিন শাররিন নাফফা-সা-তি ফিল ‘উক্বাদ। ওয়া মিন শাররি হা-সিদিন ইযা হাসাদ

সূরা আন-নাস

قُلْ أَعُوذُ بِرَ‌بِّ النَّاسِ ﴿١﴾ مَلِكِ النَّاسِ ﴿٢﴾ إِلَـٰهِ النَّاسِ ﴿٣﴾ مِن شَرِّ‌ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ ﴿٤﴾ الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ‌ النَّاسِ ﴿٥﴾ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ ﴿٦﴾

রহমান, রহীম আল্লাহর নামে। বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের, মানুষের অধিপতির, মানুষের ইলাহের কাছে, আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে; যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিনের মধ্য থেকে এবং মানুষের মধ্য থেকে।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। ক্বুল ‘আউযু বিরাব্বিন্না-স। মালিকিন্না-সি, ইলা-হিন্নাসি, মিন শাররিল ওয়াসওয়া-সিল খান্না-স, আল্লাযি ইউওয়াসউইসু ফী সুদূরিন না-সি, মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-স।

আবু দাঊদ ২/৮৬, নং ১৫২৩; তিরমিযী, নং ২৯০৩; নাসাঈ ৩/৬৮, নং ১৩৩৫

★ সালাম ফিরানোর পর যিকর #৬

আয়াতুল কুরসি: প্রত্যেক সালাতের পর একবার।

اللَّهُ لَآ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ ۚ

আল্লাহ্, তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ্ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বসত্তার ধারক।

আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যূল কাইয়্যূমু

لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ

তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়।

লা তা’খুযুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম।

لَّهُ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ ۗ

আসমানসমূহে যা রয়েছে ও যমীনে যা রয়েছে সবই তাঁর।

লাহূ মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্বি।

مَنْ ذَا الَّذِى يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِۦ ۚ

কে সে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে?

মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহূ ইল্লা বিইযনিহী।

يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ

তাদের সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে তা তিনি জানেন।

ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম।

وَلَا يُحِيطُونَ بِشَىْءٍ مِّنْ عِلْمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ

আর যা তিনি ইচ্ছে করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টন করতে পারে না।

ওয়ালা ইয়ুহীতূনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহী ইল্লা বিমা শাআ।

وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ ۖ

তাঁর ‘কুরসী’ আসমানসমূহ ও যমীনকে পরিব্যাপ্ত করে আছে;

ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব।

وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ

আর এ দুটোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না।

ওয়ালা ইয়াউদুহূ হিফযুহুমা

وَهُوَ الْعَلِىُّ الْعَظِيمُ

আর তিনি সুউচ্চ সুমহান।

ওয়া হুয়াল ‘আলিয়্যূল ‘আযীম

নাসাঈ, সূরা আল-বাকারাহ্‌-২৫৫

★ সালাম ফিরানোর পর যিকর #৭

মাগরিব ও ফজরের নামাযের পর ১০ বার করে পড়বে,

لَا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান

লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হাম্‌দু ইয়ুহ্‌য়ী ওয়াইয়ূমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর

তিরমিযী ৫/৫১৫, নং ৩৪৭৪; আহমাদ ৪/২২৭, নং ১৭৯৯০

★ সালাম ফিরানোর পর যিকর #৮

উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুলযোগ্য আমলের দো'আ

ফজর নামাযের সালাম ফিরানোর পর পড়বে,

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْماً نافِعاً، وَرِزْقاً طَيِّباً، وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً

হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করি।

আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা ‘ইলমান না-ফি‘আন্ ওয়া রিয্‌কান ত্বায়্যিবান ওয়া ‘আমালান মুতাক্বাব্বালান

ইবন মাজাহ্‌, নং ৯২৫; সহীহ ইবন মাজাহ, ১/১৫২

হে আল্লাহ আমাদেরকে  ঈমান ও নেক আমলের সাথে পাপমুক্ত অবস্থায় মৃত্যু দান করুন। আমীন।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.